
ভূমিকা
ইতিহাসের পাতায় অনেক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। কিন্তু এমন রাষ্ট্র খুব কম আছে, যার জন্মের পেছনে রয়েছে লক্ষ মানুষের কান্না, রক্ত, ঘরছাড়া জীবনের ইতিহাস। ইসরায়েল সেই রাষ্ট্র, যার প্রতিষ্ঠা থেকেই শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণের ট্র্যাজেডি। ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সেই ট্র্যাজেডি চলছে—জমি দখল, ঘর উচ্ছেদ, গুলি, বোমা, আর লাশ।
এই লেখা সেই নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর যারা আজও বেঁচে থাকার লড়াই করছে, নিজেদের ভিটেমাটি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে।
📜 ইতিহাসের পিছনে এক রক্তাক্ত গল্প
১৯৪৮ – দখলের সূচনা
ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া মাত্রই শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ হামলা।
-
প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত হয়।
-
৫০০-র বেশি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
-
এ ঘটনাকে বলা হয় “নাকবা” – বিপর্যয়।
ইহুদি শরণার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্র বানাতে গিয়ে একটি জাতির অস্তিত্ব মুছে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়।
🏴 ১৯৬৭ – পুরো দখলদারির চেহারা বদলে যায়
“Six-Day War”-এর পর ইসরায়েল জবরদখল করে:
-
গাজা উপত্যকা
-
পশ্চিম তীর
-
পূর্ব জেরুজালেম
এই অঞ্চলগুলোর প্রতিটি ইন্টারন্যাশনালি স্বীকৃত ফিলিস্তিনের অংশ, কিন্তু ইসরায়েল সেখানে অবৈধভাবে বসতি তৈরি করে, সেনা মোতায়েন করে এবং ফিলিস্তিনিদের থেকে জমি, স্বাধীনতা ও অধিকার কেড়ে নেয়।
🧱 “বসতি” নয়, এটা ধাপে ধাপে জমি হরণ
ইসরায়েল বলছে তারা “সিকিউরিটি”-এর জন্য পশ্চিম তীরে “সেটেলমেন্ট” বানাচ্ছে। কিন্তু আসলে এই বসতিগুলো:
-
ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে বানানো হয়
-
স্থানীয় আরবদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ
-
এই বসতির কারণে ফিলিস্তিনিরা নিজের গ্রামের ভেতর দিয়েও হাঁটতে পারে না
উদ্দেশ্য পরিষ্কার—একটা সময় আসবে, যখন পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের কোনো জায়গা থাকবে না।
🧱 পূর্ব জেরুজালেম: এক ধর্মীয় নগরীর গলা চেপে ধরা
-
মুসলিমদের পবিত্র নগরী আল আকসা মসজিদ যেখানে অবস্থিত, সেই পূর্ব জেরুজালেমেও ইসরায়েলি দখলদারি চলছে।
-
প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের ঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে
-
ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদের ভেতর ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের মারধর করে
এইটা শুধু দখল না, এটা এক ধর্ম ও জাতিকে অসম্মান ও নিপীড়নের চূড়ান্ত রূপ।
🔒 গাজা: এক খোলা কারাগার
গাজা এখন এক “open-air prison”।
-
২০ লাখ মানুষ, কিন্তু চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইসরায়েল
-
পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, খাদ্য—সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ
-
মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলি বোমা ফেলে শিশুদের খণ্ডবিখণ্ড করে দেয়
গাজার শিশুরা জানে না পাখির ডাক কেমন, তারা শুধু শোনে ড্রোন, যুদ্ধবিমান আর বোমার শব্দ।
🧠 দখলদারির জন্য প্রযুক্তি, সেনা, গোয়েন্দা
ইসরায়েল শুধু সেনা দিয়ে দখল করে না—তারা ব্যবহার করে:
-
Mossad – গুপ্তচর, হত্যাকাণ্ড, হ্যাকিং
-
Iron Dome – আকাশ প্রতিরক্ষা, কিন্তু পাল্টা বোমা সাধারণ মানুষের ওপর ফেলে
-
Unit 8200 – সাইবার হ্যাকিং, গোয়েন্দা নজরদারি
একটা পুরো জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে তারা প্রযুক্তিকে অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে।
⚖️ আন্তর্জাতিক আইন কী বলে?
জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবে বলা হয়েছে—
-
ইসরায়েলের দখল অবৈধ
-
বসতি নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন
-
ফিলিস্তিনিদের অধিকারে হস্তক্ষেপ মানবাধিকার লঙ্ঘন
কিন্তু বিশ্বশক্তিগুলোর নীরব সম্মতি আর দ্বিচারিতা এই অন্যায়ের হাতকে আরও শক্তিশালী করেছে।
🩸 একজন ফিলিস্তিনির আর্তনাদ
“আমার ছেলেটা স্কুলে যাচ্ছিল, ইসরায়েলি সেনা চোখে গুলি করল। এখন ও আর কিছুই দেখতে পায় না।”
— এক ফিলিস্তিনি বাবা
এই একটা কথা বোঝার জন্য যথেষ্ট যে, এই সংঘাত রাজনীতির না, এইটা মানবতার।
✊এই অন্যায় আর কতদিন?
ইসরায়েলের প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সামরিক বাহিনী যতই শক্তিশালী হোক, ইতিহাস একদিন অন্যায় দখলদারদের ক্ষমা করে না।
ফিলিস্তিন একটি জাতি, একটি স্বপ্ন, একটি ন্যায্য দাবি।
তাদের রাষ্ট্র থাকবে, স্বাধীনতা থাকবে—এই অধিকার কেউ দান করে না, তারা অর্জন করে। আর এই ইতিহাস এখনই লেখা হচ্ছে।
🔮 শেষ সময়ের ভবিষ্যৎ: ন্যায়ের বিজয়ের প্রতিশ্রুতি
বর্তমান ফিলিস্তিন তথা বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শুধু একটি রাজনৈতিক কেন্দ্র নয়, এটি শেষ যুগের ঘটনাগুলোর প্রধান স্থান।
১. ⚔️ ইমাম মাহদি (আঃ) আসবেন
যখন পৃথিবীতে অন্যায়-অবিচার চরমে পৌঁছাবে, তখন আল্লাহ এক ন্যায়পরায়ণ নেতা, ইমাম মাহদি (আঃ)-কে পাঠাবেন।
-
তিনি পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন
-
মুসলমানরা তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবেন
-
এবং জুলুমের বিরুদ্ধে একটি বড় লড়াই শুরু হবে
২. 👁🗨 দাজ্জালের ফিতনা
এই সময়েই আসবে সবচেয়ে বড় ধোঁকা – দাজ্জাল।
-
সে নিজেকে খোদা দাবি করবে
-
তার অনুসারীদের মধ্যে থাকবে ইসরায়েলের মতো জুলুমকারী শক্তি
-
সে জেরুজালেম-কেই নিজের শক্তির ঘাঁটি বানাবে
৩. 🕊️ ঈসা (আঃ)-এর আগমন
এরপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন দামেস্কে।
-
তিনি ইমাম মাহদির পেছনে নামাজ পড়বেন
-
তারপর তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন
-
সত্য, শান্তি আর ন্যায়ের বিজয় হবে পুরো পৃথিবীতে
-
ফিলিস্তিনও ফিরে পাবে তার হারানো সম্মান আর স্বাধীনতা
🕊️ শেষ কথা
ইসরায়েলের অন্যায় দখল চিরকাল চলবে না।
এই জমিনে আবার শান্তি ফিরবে, ইনশাআল্লাহ।
আমরা হয়তো এখন নির্যাতন দেখছি, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা সবচেয়ে বড়।
অন্ধকার যত গভীর হোক, আলো আসবেই।
আর সেই আলো হবে শেষ যুগের সত্যের বিজয়।